জাতীয় সংসদে পাসকৃত ‘গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩’ এর প্রতিবাদে গ্রামীণ ব্যাংক কর্মচারী সমিতির উদ্যোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসচি

গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর পরিবর্তে জাতীয় সংসদে পাসকৃত ‘গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩’ এর মাধ্যমে  রাজনীতিকরণ করে গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার যে পায়তারা করা হয়েছে আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সকল প্রকার রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে থেকে কাজ করে যাচ্ছিল বলেই গ্রামীণ ব্যাংক জাতীয় ও আšর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল শাšি পুরস্কারে ভূষিত হয়। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৯ জন প্রতিনিধি গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীদের দ্বারা প্রতিটি কেন্দ্র, শাখা, এরিয়া এবং যোন পর্যায় থেকে কয়েকটি ¯র অতিক্রম করে তাঁরা নির্বাচিত হয়ে আসেন। এ নির্বাচন প্রক্রিয়া অত্যš স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩ পাস হওয়ার ফলে পরিচালক নির্বাচন বিধিতে যে পরিবর্তন আসবে তাতে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে পরিচালক নির্বাচন হবে। যখনই নতুন বিধি মোতাবেক এ নির্বাচন হবে তখনই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রাজনীতির প্রভাব পড়বে। ফলে কেন্দ্র ও শাখায় সদস্যদের মধ্যে দলীয় কোন্দল, মারামারি এবং হানাহানি সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে যে বিশৃংখলার সৃষ্টি হবে তাতে ঋণ আদায় ও ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া মারাÍকভাবে ব্যহত হবে। যে কারণে গ্রামীণ ব্যাংক ক্রমশঃ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। আমরা গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় পরিচালক নির্বাচনে বাইরের হ¯ক্ষেপ বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ছিল সার্বভৌম। পরিচালনা পর্ষদ স্বাধীনভাবে ব্যাংক পরিচালনা করেছে বলেই গ্রামীণ ব্যাংক একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩ এ পরিচালনা পর্ষদের সে ক্ষমতা বিলুপ্ত করা হয়েছে। নতুন আইনে যে কোন নীতিগত সিদ্ধাš গ্রহণের প্রাক্কালে সরকারের সাথে পরামর্শ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে একদিকে সিদ্ধাš গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আমলাতাšিক জটিলতার সৃষ্টি হবে। ফলে সিদ্ধাš গ্রহণ বিলম্বিত হবে। অপরদিকে সিদ্ধাš গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৮৪ লাখ সদস্যের আশা আকাংখার প্রতিফলন ব্যাহত হবে। তাই আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের স্বকীয়তা বজায় রেখে নীতিগত সিদ্ধাš গ্রহণে পর্বের অবস্থা বহাল রাখার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩ এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ে বোর্ডের ক্ষমতাকে খর্ব করে  চেয়ারম্যানকে একক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্টির মল উদ্দেশ্য হলো ভূমিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠির আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন। তাই এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সদস্যদের মতামত সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়াই গ্রামীণ ব্যাংক সে লক্ষ বা¯বায়নে সক্ষম হচ্ছে। পরিচালনা পর্ষদের শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান কর্তৃক বাছাই কমিটি দ্বারা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোনীত হলে ব্যাংক পরিচালনায় তাঁদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না। তাই আমরা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে পর্বের ন্যায় পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩ এ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিচালক নির্বাচন না হওয়া পর্যš সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ২ জন পরিচালক এবং চেয়ারম্যানসহ ৩ জন পরিচালকের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হবে বলে উল্লেখ থাকায় ব্যাংকের ৭৫ ভাগ শেয়ারহোল্ডার মালিকগণ অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে তাঁদের স্বার্থের বিরুদ্ধেও পরিচালনা পর্ষদের সভায় যে কোন সিদ্ধাš হয়ে যেতে পারে। যে কারণে রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকের ন্যায় গ্রামীণ ব্যাংককেও বড় বড় আর্থিক অনিয়ম দেখা দিতে পারে। তাই আমরা শেয়ারহোল্ডার সদস্যের মালিকদের ছাড়া কোরাম পর্ণ হওয়ার সিদ্ধাšটি বাতিল করার জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
আমরা সরকারকে আবারও বিনয়ের সাথে আহবান জানাচ্ছি এখনো সময় আছে গ্রামীণ ব্যাংককে নিজস্ব গতিতে চলতে দিন। গ্রামীণ ব্যাংকের স্বকীয়তা বজায় রাখার লক্ষ্যে আমরা আজ কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসচি পালন করছি।