ভারতীয় কয়লা আমদানি ও রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিল কর

“আমরা, নিম্ন-স্বাক্ষরকারীগণ, সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারত থেকে কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। ভারতীয় প্রধান প্রধান সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ইতোমধ্যে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ থেকে কলকাতা বন্দরে ৩ হাজার ৮০০ টন কয়লা খালাস করা হয়েছে যা জাহাজের মাধ্যমে মংলা বন্দরে পাঠানো হবে। পরীক্ষামূলকভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য এই কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। প্রকাশিত সংবাদে আরো জানানো হয়েছে যে, পুরোদমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে প্রতি মাসে কলকাতা থেকে ২০ হাজার টন কয়লা সরবরাহ করা হবে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানির চুক্তির কোনো খবর ভারত বা বাংলাদেশের সরকার জানায়নি বা কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। এ প্রকল্পের শুরু থেকেই বিশ্ব-জনমত, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও পরিবেশগত ঝুঁকি উপেক্ষা করে ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অসামরিক সম্পদ ও অর্থ ব্যয় সম্পর্কিত চুক্তি সম্পাদনে এ ধরনের গোপনীয়তা ও অস্বচ্ছতা গণতান্ত্রিক নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী এবং নাগরিকদের জানার অধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের নামান্তর।
ভারতীয় কয়লা পৃথিবীর সবথেকে নিম্নমানের কয়লার অন্যতম। প্রতি কেজি অস্ট্রেলীয় বা ইন্দোনেশীয় কয়লায় যেখানে ৭০ গ্রাম ফ্লাইঅ্যাশ তৈরি হয় সেখানে ভারতীয় কয়লায় ফ্লাইঅ্যাশ তৈরি হয় ৩০০ গ্রাম। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ভারতীয় কয়লা দরকার ৭০০ গ্রাম, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা দরকার ৪৫০ গ্রাম ও ইন্দোনেশিয়ার ৫০০ গ্রাম। যে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য ভারত নিজেই অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করে থাকে। ভারতীয় কয়লা ব্যবহার করলে একদিকে ৪০ শতাংশ বেশি কয়লা দরকার হবে অন্যদিকে প্রায় ৫ গুণ বেশি ফ্লাইঅ্যাশের দূষণ বাড়বে।
ভারত থেকে কয়লা আনার ক্ষেত্রে রায়মঙ্গল-চালনা-মংলা রুট ব্যবহার করা হবে যা সুন্দরবনের ভিতরের বলেশ্বর, শিবসা, শাকবাড়িয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, কালিন্দী, পানগুছি ও রায়মঙ্গল নদী ব্যবহার করা হবে। প্রতি মাসে ভারত থেকে ৩০টি ও আকরাম পয়েন্ট থেকে ৮০টি কয়লাবাহী জাহাজ এসব নদী দিয়ে চলাচল করবে। গত ১০ বছরে সুন্দরবেনর শ্যালা, পশর, কুঙ্গা ও ভৈরব নদীতে গত ১০ বছরে ১১টি এবং ভারতের অংশে ৯টি কার্গো ফ্লাইঅ্যাশের ডুবে যায় যার মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার টন ফ্লাইঅ্যাশ, ৫ হাজার টন কয়লা, ৩৭০ টন জ্বালানি তেল, ৫০০ টন পটাশিয়াম, ১ হাজার ৩৬ টন জিপসাম ও ৭০০ টন গম সুন্দরবনের নদী ও বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে এর দূষণের সঙ্গে কয়লা পরিবহণের দূষণ যুক্ত হয়ে সুন্দরবনের পানি, মাটি, গাছপালা ও প্রাণসম্পদের যে ক্ষতি হবে তাতে বিশ্বঐতিহ্য ও বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক ঢাল ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে আমরা মনে করি।
আমরা অবিলম্বে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও ভারত থেকে কয়লা আমদানির অন্যায্য, অস্বচ্ছ ও গোপন উদ্যোগ বাতিলের জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি।

স্বাক্ষরকারী :

১. অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২. অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)
৩. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
৪. খুশি কবীর, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি
৫. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)
৬. ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, আহ্বায়ক, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি)
৭. হাসান মেহেদী, সদস্য সচিব, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি)”

Press Release

বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি)
July 2,2021

DHAKA