“শেখ হাসিনার নেতৃতে রাষ্ট্রকে এখন ফ্যাসিবাদী রূপ দেয়া হয়েছে”: রিজভী

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, প্রেস বিজ্ঞপ্তি: “শেখ হাসিনার নেতৃতে রাষ্ট্রকে এখন ফ্যাসিবাদী রূপ দেয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান ফ্যাসিষ্ট রেজিমের রূপান্তর ছাড়া বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই। এরা টিকে থাকলে ন্যুনতম লিবারেল বা উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অধরাই থেকে যাবে। মানুষের নাগরিক ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করা, দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য অবৈধ সরকারের সন্ত্রাসের পরিকাঠামো এবং চক্রান্ত জাল ছিন্ন করতে আজ জনগণ গ্রামের মেঠো পথ থেকে শুরু করে রাজপথে নেমে এসেছে। অবৈধ এই সরকারের কোন শক্তি নেই জনগণের সম্মিলিত শক্তিকে প্রতিহত করার। ধন্যবাদ সবাইকে।”

তারিখঃ ১৭ নভেম্বর ২০১৩
প্রেস ব্রিফিং
ব্রিফিং ঃ এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী
যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
* গতকাল গভীর রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের বাসায় ডিবি পুলিশ-র‌্যাব যৌথভাবে হানা দিয়ে বাসা তছনছ করে ফেলে এবং তার স্ত্রীর সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে।
* সপুকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
* যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মামুন হাসানের বাসায় পুলিশ হানা দিয়ে টিভি, ফ্রিজসহ মুল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় এবং সকল আসবাবপত্র ভাংচুর করে । এছাড়া পরিবারের সদস্যদের বেধড়ক মারপিট করে।

ঢাকা মহানগরঃ
মতিঝিল থানাঃ যুবদল নেতা নবুসহ ৪ জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

খিলগাঁও ঃ থানা শ্রমিক দলের সভাপতি মকবুল হোসেনকে গতরাতে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে।

চট্রগ্রাম উত্তর ঃ
বিএনপি‘র মিছিলে বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সীতাকুন্ড উপজেলা যুবদল সভাপতি ফজলুল করিম চৌধুরী, সাধারণ স¤ক্সাদক সাহাবুদ্দিন রাজু, স্বেচছাসেবক দল সভাপতি গোলাম সরওয়ার চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি আওরঙ্গজেব মো¯ফা, সাংগঠনিক স¤ক্সাদক হারুনুর রশিদ ইব্রাহীম, বিএনপি পৌর শাখার সাংগঠনিক স¤ক্সাদক মোজাহার উদ্দিন আশরাফ, যুবদল নেতা,সাইফুল ইসলাম, ঝুনা মিয়া, করিমুল মওলাসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করে।

ঢাকা জেলাঃ
কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা ছাত্রদল নেতা মির্জা নাছির,মাহবুবুল আলম কাজলসহ ৩ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।

বগুড়া ঃ জেলা ছাত্রদল সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, যুবদল সাধারণ স¤ক্সাদক আরাফাতুর রহমান আপেল, শহর যুবদল সাধারণ স¤ক্সাদক আদিল শাহরিয়ার গোর্কিসহ গুরুত্বপ–র্ণ নেতৃবৃন্দের বাসায় পুলিশ তল-াসীর নামে ভাংচুর এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করে।

বরগুনা ঃ জেলা ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা শাহজালাল রুমী, ছাত্রদল নেতা ফায়জুল মালেক সজীব, যুবদল নেতা সোহাগ বিন আকবরসহ ৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে এখন পর্যš পাওয়া তথ্য মতে গ্রেফতার-২৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। আহত – ২৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী।

গতকাল ১৬ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্তু ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে গ্রেফতার-৮০ জনের অধিক নেতাকর্মী ।
আহত – ৪০০ জনের অধিক নেতাকর্মী।

বন্ধুরা,
শাসকদলের ক্ষমতার প্রতি মোহান্ধতার কারনে দেশ আজ উচ্ছন্নে যেতে বসেছে। গণতন্ত্রের কথা বলে এরা ক্ষমতায় আসে কিন্তু ক্ষমতার অধিকারী হয়ে একটা ফাঁপানো অহংমন্যতা এদেরকে পেয়ে বসে। যার কারনে ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই দেশের উন্নয়ন-উৎপাদনের সকল সকল কর্মসূচিকে শিকেয় তুলে রেখে গণবিরোধী কর্মকান্ডে লেগে যায়। এর ফলে ক্রমাগতভাবে এরা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর তখনই এরা মসনদ আঁকড়ে ধরার জন্য এহেন পন্থা নেই যা তারা অবলম্বন করে না। সকল পন্থা ব্যর্থ হয়ে গেলে তখন তারা বন্দুকের শরনাপন্ন হন। নিজের জনগণ, নিজ দেশের বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সাথে বন্দুকের ভাষায় কথা বলে। প্রধানমন্ত্রী প্রায়শ:ই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেন, কিন্তু জনগণ প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় হোঁচট খায়, তারা মনে করে তিনি ক্ষমতায় এসে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন-অবাধে দেশময় দাপিয়ে বেড়ানোর জন্য। হত্যা, লুন্ঠন, নারী নির্যাতন, গুম, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, টেন্ডারবাজী, বাস-লঞ্চ-টার্মিনাল দখল থেকে শুরু করে বিরোধী দলের নেতাদের পুকুরের মাছ এবং গোয়ালের গরু পর্যন্ত ধরে নিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত গণতন্ত্র ফেরৎ দেয়ার সুযোগে।
বন্ধুরা,
ক্ষমতাসীন মহাজোটের রাজনৈতিক মতাদর্শ গণতন্ত্রের মৌলনীতি বিরোধী, এরা ফ্যাসিবাদের পুজারী, এরা দেশকে আধিপত্যবাদের বলয়ে নিয়ে যেতে চায় বলেই সবদলের প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ একটা সর্বজনগ্রাহ্য এবং সর্বজনমান্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে অনীহা দেখাচ্ছে। এদের প্রধান প্রবণতা হচ্ছে একদলীয় শাসনব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি। তাই একটি অর্থবহ সংলাপের মধ্য দিয়ে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে গণতন্ত্রের সামগ্রিক অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে আগ্রহ নেই শাসকদলের। বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে বিএনপি’র পক্ষ থেকেই বারবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নিকট চিঠি পাঠিয়েছিলেন কিন্তু অনিচ্ছার প্রকাশ ছাড়া তাদের দিক থেকে আর কিছু দেখা যায়নি। এরপরে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে ফোনালাপের চমক দেখাতে গিয়ে আসলে তিনি দেশবাসীকে হলুদ সর্ষে ফুল দেখালেন। তিনি বললেন, লাল টেলিফোনে বিরোধী দলের নেতাকে পাননি। অথচ গত কয়েক মাস ধরে লাল টেলিফোন বিকল হয়ে পড়েছিল। আসলে যে প্রধানমন্ত্রী নিজের বাস করা বাড়ি থেকে বিরোধী দলের নেতাকে বের করে দিতে পারেন তিনি কি তাঁর টেলিফোন চালু রাখবেন-একথা জনগণ বিশ্বাসই করে না। আসলে স্ববিরোধীতা আর দ্বিমূখী আচরণের আধার হচ্ছে বর্তমান শাসকদল আওয়ামী লীগ। যদি শেখ হাসিনা কোনো মিমাংসা চান তাহলে তাঁকে তো কোনো টেলিফোন করবার দরকার নেই। যে পদ্ধতিতে শেখ হাসিনা সংবিধান বদলিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে সংবিধান বদলিয়ে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করলেই বিদ্যমান সংকটের অবসান হয়।
সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
গতকাল প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতার উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি দেশ ও জনগণের স্বার্থে তাঁকে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতা যে ভাষায় আমার আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করলেন তা মোটেই শোভন ছিলনা।” তাঁর এই বক্তব্যটি স্ববিরোধীতায় ভরা। জানিনা তাঁর রাজনীতির শিক্ষকরা ‘মিথ্যা’ নামক টার্মটি তাঁকে কিভাবে শিখিয়েছিলেন। আড়ালে বললেও এক কথা, কিন্তু প্রকাশ্য জনসমক্ষে টাওয়ারিং মিথ্যাগুলো যখন জনগণ শোনে তখন নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর মান সম্পর্কে তারা লজ্জিত ও ক্ষুদ্ধ হয়। সর্বসিদ্ধ সত্যগুলোকে তিনি নির্দ্বিধায় ঢেকে ফেলতে পারঙ্গম। সেদিনের ফোনালাপে বিরোধী দলের নেতা প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান যে করেননি সেটির জলজ্যান্ত রেকর্ড মানুষের ঘরে ঘরে।
আসলে দেশের নন, তিনি প্রেধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের। তিনি গতকাল ফটিকছড়ির ক্ষতিগ্রস্তদের চেক প্রদান করেছেন। চেকপ্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন-এই লোকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের হামলায়। কিন্তু তাঁর সরকারি বাহিনী গত ফেব্র“য়ারী মাস থেকে যে ব্যাপক হত্যাকান্ড চালালো, ৫ মে যেভাবে নিরীহ হেফাজতিদের হত্যা করলো, বিগত কয়েক দিনের হরতালে পাখির মত গুলি করে মানুষ মারলো, চাঁদপুর, রাজশাহী, ফরিদপুর, পাবনা, সীতাকুন্ড, কুলিয়ারচর, লালমনিরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহের মানুষ কী এদেশের নাগরিক নয় ? আপনি যে চেক দিচ্ছেন এটাতো জনগণের টাকা, নিশ্চয়ই আপনি টুঙ্গীপাড়া থেকে সেই টাকা নিয়ে আসেননি। জনগণের মধ্যে তো জাতীয়তাবাদী সমর্থক জনগোষ্ঠীও রয়েছে।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
শেখ হাসিনার নেতৃতে রাষ্ট্রকে এখন ফ্যাসিবাদী রূপ দেয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান ফ্যাসিষ্ট রেজিমের রূপান্তর ছাড়া বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই। এরা টিকে থাকলে ন্যুনতম লিবারেল বা উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অধরাই থেকে যাবে। মানুষের নাগরিক ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করা, দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য অবৈধ সরকারের সন্ত্রাসের পরিকাঠামো এবং চক্রান্ত জাল ছিন্ন করতে আজ জনগণ গ্রামের মেঠো পথ থেকে শুরু করে রাজপথে নেমে এসেছে। অবৈধ এই সরকারের কোন শক্তি নেই জনগণের সম্মিলিত শক্তিকে প্রতিহত করার। ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।