‘সরকারের উচিত ছিল আগে রামপাল ও বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা’

তেল-গ্যাস-খনিজ

সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেছেন, পরিবেশের কথা চিন্তা করেই যদি সরকার ১০টি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করতো, তবে সবার আগে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করা উচিত ছিল।  কারণ, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ ও সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে

সম্প্রতি ১০টি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।  এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোটের আয়োজন করা এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আজ সোমবার আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, সরকার এখন ১০টি কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেছে, ভবিষ্যতে আরও এমন অনেক প্রকল্প বাতিল হবে।  এটাই অনিবার্য ভবিষ্যৎ।  যেগুলো বাতিল করা হয়েছে সেগুলোতে হয় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অর্থায়ন করছে না, না হয় পৃষ্ঠপোষক কোম্পানিগুলো সরে যাচ্ছে।  দ্য ইকোনমিস্ট – এর মতে, কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুতের আর্থিক, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেকোনো ব্যবসার মধ্যে সবচেয়ে বেশি।  এজন্য বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রগুলো কয়লা-বিদ্যুৎ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, রামপাল ছাড়া বাতিলের তালিকায় প্রথমে থাকা উচিত ছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও জাপানের অর্থায়নে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (প্রথম পর্যায়)।  মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়ানো বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, মাতারবাড়িতে কোহেলিয়া নদী ভরাট করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চলছে।  এগুলোকে সবার আগে বাতিল করা উচিত ছিল। 

বাতিল হওয়া কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আমদানী করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিণত করা হতে পারে – এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, কয়লা-বিদ্যুৎ অচল হয়ে যাওয়ায় এলএনজি লবিস্টরা এখন অনেক বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে।  এজন্য দেশিয় গ্যাসের আবিষ্কার ও উত্তোলন বন্ধ রেখে এবং নবায়নযোগ্য শক্তিকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বিদেশি এলএনজি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে সরকার অনেক বেশি উৎসাহী। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সরকারের সিদ্ধান্ত সাধুবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অবশেষে সরকার বুঝতে পেরেছে যে পরিবেশ দূষণকারী কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে সরে আসতে হবে।  এজন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।  দেশি-বিদেশি জলবায়ুকর্মীরা অনেক দিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে।  কিন্তু এস আলমের গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য সরকার বাঁশখালীর মতো রক্তে ভেজা প্রকল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা দুঃখজনক।  তিনি দাবি করেন, বাতিল করা ১০টি প্রকল্পের মতো বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রও বাতিল করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোটের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব হাসান মেহেদী।  সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী সদস্য সাজিয়া শারমিন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

২৮ জুন ২০২১

বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোট