নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করায় বৃহস্পতিবার, রবি ও সোমবার জামায়াতরে ৭২ ঘন্টা হরতাল ঘোষণা

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, (এনএসনিউজওয়্যার) — বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে “হত্যার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করে” মৃত্যুদ-ে দ-িত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ৩০ অক্টোবর ও ২ এবং ৩ নভেম্বর যথাক্রমে বৃহস্পতি, রবি ও সোমবার দেশব্যাপি ৭২ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচিসহ নি¤েœাক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ২৯ অক্টোবর নি¤েœাক্ত যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন ঃ-
“সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ যে অভিযোগ উত্থাপন করেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও কাল্পনিক। যার প্রমাণ তার জন্মস্থান পাবনার একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ ৩ জন বিশিষ্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সেখানে তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সাথে তার দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। তারপরও জনাব নিজামীকে মৃত্যুদন্ডে দ-িত করায় দেশবাসী বিস্মিত, হতবাক ও গভীরভাবে মর্মাহত। এ রায়ে মাওলানা নিজামী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দেশবাসী এ রায় প্রত্যাখ্যান করছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামী উচ্চ আদালতে আপীল করবেন। উচ্চ আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করলে মাওলানা নিজামী অবশ্যই বেকসুর খালাস পাবেন বলে আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি।
সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। শুরু থেকেই সরকার এই বিচার কার্যক্রমকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালায়। ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর পরই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এর সাথে তদানীন্তন আইনমন্ত্রীর বৈঠক, পরবর্তীতে স্কাইপ কেলেঙ্কারি, ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে সাক্ষী অপহরণ, মামলার রায়ের দিন তারিখ ঘোষণা করে সরকার ও সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমে তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
২০১৩ সালে তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিশরে গিয়ে মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করে বক্তব্য রাখেন। সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতাগণ নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে মর্মে ঘোষণা দেন। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণজাগরণ মঞ্চের দাবী বিবেচনায় নিয়ে রায় দেয়ার জন্য বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানান। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বানকিমুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরী জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে তার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিচার সরকারের নির্ধারিত ছকে সম্পন্ন হচ্ছে বলে দেশবাসীর কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের এ ধরনের বক্তব্যে বিচার কার্যক্রমের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়।
সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশকে এক ভয়াবহ সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চায়। সরকারের জুলুম, নির্যাতন ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আমরা নি¤েœাক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করছি :
১) ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৩১ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার হরতাল।
২) ৩১ অক্টোবর শুক্রবার আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর এই মুহূর্তে মুক্তি ও সাবেক আমীর, ভাষা সৈনিক মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়াসহ সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার সকল নেতৃবৃন্দের জন্য দেশব্যাপী দোয়ার অনুষ্ঠান।
৩) ১ নভেম্বর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও আটক সকল নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচী।
৪) ২ নভেম্বর রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ৪৮ ঘন্টার সর্বাত্মক হরতাল।
উপরোক্ত কর্মসূচী সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সফল করে তোলার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা এবং কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ ও পেশাজীবীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ তথা দেশের আপামর জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিঃদ্রঃ এ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ী, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি