বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যভান্ডারে অনিবাসী বাংলাদেশী নিজেই তার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন

“বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘজই উধঃধনধংব নিয়ন্ত্রণকারী বা বাধ্যবাধকতাপূর্ণ কোনো তথ্যভান্ডার নয়। বরং এটি বিভিন্ন দেশে বসবাসরত এবং কর্মরত প্রায় এক কোটি বাংলাদেশীকে আর্থিক সেবাভুক্তির আওতায় আনা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যে একটি প্রচারণা ও সেবামূলক তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করবে। এই তথ্যভান্ডারে একজন অনিবাসী বাংলাদেশী নিজেই তার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ উদ্যোগে সংগৃহীত তথ্যও এখানে যুক্ত করতে পারবে।”

ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, প্রেস বিজ্ঞপ্তি (গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক এর বক্তব্য) — আজকের (২৫ নভেম্বর ২০১৩) এই অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরবৃন্দ, চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট এ্যাডভাইজার জনাব আল্লাহ মালিক কাজেমী, সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব এম. ই. চৌধুরী শামীম, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং যাদের জন্য এই অনুষ্ঠান, সেই অনিবাসী বাংলাদেশী বন্ধুরা, সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। আজ ঘরোয়া পরিবেশে আমরা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। আর এই পদক্ষেপটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ঘজই উধঃধনধংব ওয়েবলিঙ্ক চালু করা। আমাদের প্রবাসী এবং অনিবাসী বাংলাদেশী বন্ধুদের আর্থিক সেবাভুক্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্যে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাদের যে কোনো আর্থিক সেবার চাহিদা পূরণ এবং জিজ্ঞাসার জবাব দেয়া ও সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করবো।

২। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌছে দেয়া এবং আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের সহায়তা করাই হচ্ছে আর্থিক সেবাভুক্তি বা ফিন্যন্সিয়াল ইনক্লুশন। আর্র্থিক সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ভৌগলিক দূরত্ব এবং পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে অনেক প্রবাসী এবং অনিবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং সেবার সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে না। দূরত্বের পাশাপাশি প্রচারণার অভাব এবং তথ্য প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা আর্থিক সেবাভুক্তিকে ব্যাহত করছে। আমরা ঘজই উধঃধনধংব ওয়েবলিঙ্কের মাধ্যমে প্রবাসী এবং অনিবাসীদের জন্যে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চাই।

৩। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে আমাদের অর্থনীতি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। অথচ প্রবাসীরা সবসময় তাদের পাঠানো এই টাকা যথাযথভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন না। অভিযোগ রয়েছে যে অনুৎপাদনশীল খাতে, জমি ক্রয়/বাড়ি ক্রয়ে তাদের অর্থের একটা অংশ ব্যয় হচ্ছে। কষ্টার্জিত এই অর্থ যথাযথ বিনিয়োগ করতে না পারার কারণে তারা এর রিটার্ন ঠিকভাবে পাচ্ছেন না। ফলে তাদের পরিবার এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসীরা নিজেরাই দেশে ফিরে

বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। ঘজই উধঃধনধংব-এ তথ্য অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রবাসীরা এক নতুন সম্ভাবনার দরজায় পৌঁছে যাবেন। উৎপাদনশীল বিনিয়োগে তারা সঠিক দিক-নির্দেশনা পাবেন।

৪। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘজই উধঃধনধংব নিয়ন্ত্রণকারী বা বাধ্যবাধকতাপূর্ণ কোনো তথ্যভান্ডার নয়। বরং এটি বিভিন্ন দেশে বসবাসরত এবং কর্মরত প্রায় এক কোটি বাংলাদেশীকে আর্থিক সেবাভুক্তির আওতায় আনা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যে একটি প্রচারণা ও সেবামূলক তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করবে। এই তথ্যভান্ডারে একজন অনিবাসী বাংলাদেশী নিজেই তার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ উদ্যোগে সংগৃহীত তথ্যও এখানে যুক্ত করতে পারবে।

যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে এ তথ্যভান্ডার তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে, তা হচ্ছে-

* বিভিন্ন আর্থিক সেবা সম্পর্কে অনিবাসী বাংলাদেশীকে ই-মেইলে অবহিত করা;

* বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগের জন্যে এবং এ সম্পর্কিত যাচিত পরামর্শ প্রদান ও সমস্যার সমাধান;

* ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে অবহিত করা;

* বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য প্রদান;

* আর্থিক সেবা পেতে অসুবিধার ক্ষেত্রে অভিযোগের মাধ্যমে সমস্যা দূর করা;

* তথ্যভান্ডারের মাধ্যমে বিদেশে বসবাসের ক্ষেত্রে অন্য বাংলাদেশীদের সাথে সহজে যোগাযোগ করা;

* অনিবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক হিসেবে ব্যবহার করা;

* বিদেশে যাওয়া, সেখানে অবস্থান, রেমিট্যান্স পাঠানো ইত্যাদি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে অবহিত করা;

* বাংলাদেশে এবং বিদেশে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়া অবহিত করা;

* ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করা;

* অর্থনৈতিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এবং সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অনিবাসীদের নিকট তুলে ধরা;

* দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের বিভিন্ন পরামর্শ বা মতামত গ্রহণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করা;

* আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিবেচ্য বিষয় সম্পর্কে আর্থিক শিক্ষা (ঋরহধহপরধষ খরঃবৎধপু) কর্মসূচির আওতায় তাদের অবহিত করা।

৫। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্থরতার প্রভাব নানাভাবে বাংলাদেশের ওপর এসেছে। আমরা তা সাহসিকতা ও যোগ্যতার সঙ্গে মোকাবেলা করছি। ঘজই ফধঃধনধংব-এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, বিনিয়োগের জন্যে বাংলাদেশই শ্রেষ্ঠ স্থান। তাদের আয় যথাযথভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলেই দেশ এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সফলতার আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। প্রবাসী এবং অনিবাসীদের এ তথ্যভান্ডারের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নতুন জগতে স্বাগত জানিয়ে এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।