রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টের তৎপরতা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্জিত: কেন্দ্রীয় ১৪ দল

ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর, (এনএসনিউজওয়্যার) — গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতদপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদ নাসিম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও
মুখপাত্র কেন্দ্রীয় ১৪ দল, আজ ১৯ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন বলেন:

“সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুগণ
শুভ সকাল।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

আপনারা জানেন গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেতা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শীর্ষ জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের প্রারম্ভে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন, যা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী ইতোমধ্যে জানতে পেরেছেন।

তৎপরবর্তী বৈঠকে দেশে বিদ্যমান সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এতদপ্রেক্ষিতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।

আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেনÑ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড দিলীপ বড়–য়া, ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদ আলী খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন, সুজিত রায় নন্দী, এস. এম কামাল হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য প্রফেসর ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার, সাম্যবাদী দলের পলিট ব্যুরোর সদস্য লুৎফর রহমান, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস. কে শিকদার, গণআজাদী লীগের নেতা ওলিউল ইসলাম, জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মহসিন প্রমখ নেতৃবৃন্দ।

সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর দোসর, যারা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, মাতৃভূমির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, যারা হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন দুষ্কর্মে জড়িত ছিলÑ সেই সকল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলছে।

জাতি গভীর আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করেছেÑ অনেকগুলো রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে। ইতোমধ্যে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে কসাইখ্যাত কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করার জন্য বিএনপি চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী জামাতিদের নিয়ে দেশে নৈরাজ্যকর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে, তাদের সহিংস বর্বরতা, ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের নৃশংসতার হাত থেকে শিশু, নারী, নিরীহ পথচারী, বাসচালক, সিএনজি চালক কেহই রেহাই পাচ্ছে না।

অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি, গুলি চালানো ইত্যাদির মধ্য দিয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চার করে তাদের হীন উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠেছে।

তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ পুলিশ বিজিবির উপরও চোরাগুপ্তা আক্রমণ চালাচ্ছে। আমরা বিএনপি-জামাতিদের এই নৃশংস উন্মত্ত আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

একই সাথে দেশের সকল গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিএনপি-জামাতিদের এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

সভায় দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়, শত ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে যে কোন মূল্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সফল করে তোলা হবে।

জনগণ যাতে অধিক হারে ভোট কেন্দ্রে সমবেত হয় এবং ভোটদানে অংশগ্রহণ করে তার জন্য ব্যাপক গণসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি গণসংযোগ চালিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত করার আহ্বান জানানো হয়।

সভায় কুখ্যাত নরঘাতক যুদ্ধাপরাধী কসাইখ্যাত গণহত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী গর্বিত বাঙালি জাতি পরাজিত পাকিস্তানিদের এই ধরনের ধৃষ্ঠতা আস্ফালনকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

এই ধরনের প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে পরাজিত পাকিস্তানিরা আরেকবার প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের সভ্যতা বিবর্জিত গণহত্যা পরিচালনাকারী পাকিস্তানিরা আজো অনুতপ্ত নয়। তারা এখনো শুধরায়নি, পরিবর্তন হয়নি। ’৭১-এ যে মানবতা বিরোধী নীতি তারা গ্রহণ করেছিল তা থেকে তারা সরে আসেনি।

বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টের এই তৎপরতা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্জিত।

সভায় দৃঢ়তার সাথে বলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলবে এবং যথারীতি আদালতের রায়ও কার্যকর করা হবে।

সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, দেশব্যাপী বিএনপি-জামাতিদের মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপসনালয় ও বাড়ি ঘরে হামলা, লুটতরাজ, বৃক্ষ নিধন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট ও পাকিস্তানি পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবের ন্যায় বিএনপি-জামাতিদের দেশ ও জাতি বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামী ২২ ডিসেম্বর সকল উপজেলা, ২৩ ডিসেম্বর জেলা ও ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও অতি সম্প্রতি বিএনপি-জামাতিদের তাণ্ডব ও ধ্বংসলীলায় ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকা জনসাধারণের সাথে মতবিনিময়, পরিদর্শন ও আয়োজিত জনসবায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।