সংকট থেকে দেশকে উদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি জামায়াতের আহ্বান

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, প্রেস বিজ্ঞপ্তি: আর রক্তপাত না ঘটিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে বর্তমান সংকট থেকে দেশকে উদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আজ ১৭ নবেম্বর নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ-

“সরকার দলীয় ক্যাডার, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব দিয়ে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার অভিযান, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়ে ভোটারবিহীন একতরফা প্রহসনের নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে গত ১৬ নবেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে বিভিন্ন জনপদ রক্তাক্ত করা হয়েছে। সীতাকুন্ডে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হামলায় ১০ জন গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ ১৮ দলের দুইশতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসীরা অর্ধশতাধিক গাড়ী ভাংচুর করেছে। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ১৮ দলের ১৫ জনকে আহত করেছে এবং গত শুক্রবার কাপাসিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোঃ সেফাউল হককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সীতাকুন্ডে ১৮ দলীয় জোটের হাজার হাজার লোককে আসামী দিয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমি সরকারের এ ধরনের সন্ত্রাসী তান্ডবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি।

বর্তমান সরকার একদিকে ভোটারবিহীন একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দেশকে রক্তাক্ত করছে অপরদিকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ‘খালেদা জিয়ার কত রক্ত প্রয়োজন?’ মর্মে বক্তব্য রেখে রশিকতা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর গত পৌনে ৫ বছরের শাসনকালে সংঘটিত গণহত্যা, সন্ত্রাস ও বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গুম করার ঘটনায় জনগণের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য আর কত রক্ত চান? বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া শান্তি চান, রক্ত চান না। প্রধানমন্ত্রী শান্তি চান না বলেই দেশের নিরীহ মানুষ হত্যা করে দেশকে রক্তে রঞ্জিত করছেন।

বর্তমান অবৈধ সরকার দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী শক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিবেশী দেশের হাই কমিশনার মি: পঙ্কজ শরণের ‘বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারত আলোচনা করছে’ মর্মে প্রকাশিত বক্তব্যের দ্বারাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় ভারত হস্তক্ষেপ করছে। আওয়ামী মহাজোট সরকারকে জোর করে ক্ষমতায় রাখার জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ কখনো বরদাশত করবে না।

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ভোটারবিহীন একদলীয় প্রহসনের একতরফা নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ কখনো হতে দিবে না। দেশের জনগণ ভোটারবিহীন প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র যেকোন মূল্যে প্রতিহত করবে।

তাই গণহত্যা, গণগ্রেফতার, অত্যাচার-নির্যাতন, একগুঁয়েমী ও হঠকারীতা পরিহার করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল, বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ ১৮ দলীয় জোটের গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মী ও আলেমগণকে মুক্তি প্রদান, জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার জন্য আমি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”