উন্নয়ন অন্বেষণ’র মতে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর, (এনএসনিউজওয়্যার) — স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ’উন্নয়ন অন্বেষণ’র মতে বর্তমান আর্থিক বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি টানা তৃতীয়বারের মত পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় হ্রাস পেতে পারে।

বর্তমান সরকারের মেয়াদ সমাপ্তির প্রাক্কালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির ’ষাম্মসিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’ মতে, অদূরদর্শী নীতি সৃষ্ট রাজস্ব ও মুদ্রা অব্যবস্থাপনার ফলে চলতি আর্থিক বছরে প্রবৃদ্ধির হার গত দশকের গড় হার ছয় শতাংশেরও নিচে যেতে পারে। অব্যস্থাপনার সাথে সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্ত হয়েছে।

বেসরকারি বিনিয়োগ সম্পর্ক আলোচনা করতে যেয়ে, ঋণের বিস্তার ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির মধ্যে যোগসূত্র নির্দেশ করে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলছে যে, ঋণের প্রবৃদ্ধির হারের নি¤œগতি বিনিয়োগ হ্রাস করছে। ফলে মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। ২০১৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ঋণ প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.১৮ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু উক্ত বৃদ্ধি মুদ্রানীতিতে ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫.৩২ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবাহ লক্ষ্যমাত্রা ১৫.৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির নি¤œমুখীতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্প ঋণ বিতরণ ৮৮৮০.৭৯ কোটি টাকা দাঁড়ায়, যা গত পাঁচ প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কৃষি ঋণের প্রবৃদ্ধির হার ১৪৩.২ শতাংশ ছিল। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে সেপ্টেম্বর মাস থেকে কমে ঋণ বৃদ্ধি ঋণাত্বক ৫.৪ শতাংশে দঁড়ায় ।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি ২১.২৪ শতাংশ বেড়েছে অন্যদিকে আমদানি ১০.৪৯ শতাংশ বেড়েছে ।

’উন্নয়ন অন্বেষণ’ মনে করছে, বড় রকমের ঋণ কেলেঙ্কারী, ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি ব্যব¯া’পনাকে আরও দূর্বল করে দিয়েছে। ’সম্পদ আয় হারে’র মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা দক্ষতা পরিমাপ করা হয়। ২০১২ সালে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক ’সম্পদ আয়ের হার’ কমে ০.৬০ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ২০১১ সালে ১.৩ শতাংশ ছিল ।

২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৭.১৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। এই হার ২০০৫-০৬ কে ভিত্তি বছর হিসেবে ধরে পয়েন্ট থেকে পয়েন্ট ভিত্তিতে

নির্ণীত। গত বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি ৬.৫৫ শতাংশ ছিল। মূল্যস্ফীতি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন নির্বাহের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।

দারিদ্র্য হ্রাসের হারের নি¤œগতি উল্লেখ করে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলছে, ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্য ৮.৯ শতাংশীয় পয়েন্ট কমলেও পরবর্তী পাঁচ বছরে (২০০৫-২০১০) এই কমার হার ৮.৫ শতাংশ ছিল।

’উন্নয়ন অন্বেষণ’ বর্তমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি থেকে বেড়িয়ে রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের সুপারিশ করেছে। সংকোচনমূলক নীতি বিনিয়োগ চাহিদা কমিয়ে উৎপাদন হ্রাস করছে। তথাকথিত অদূরদৃষ্টি সম্পন্ন সংস্কার কর্মসূচি ও নীতিমালা একদিকে প্রবৃদ্ধিকে যেমন ব্যহত করছে, অন্যদিকে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজস্ব আয়ের উন্নতির জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি কর কাঠামোর সংস্কার এবং করজাল বৃদ্ধি ও ফাঁকি রোধের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণের প্রস্তার করছে।