বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিবৃতি: “নির্বাচন কমিশন প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে “

ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর, (এনএসনিউজওয়্যার) –- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ এক বিবৃতিতে বলেন, “সরকারের পোষ্য নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে ঘোষিত আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দলীয় আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তাদের দিয়ে সাজানো প্রশাসনের সহযোগীতায় ১৫৪ জন ব্যক্তিকে (আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে যে প্রহসনের নাটক নির্বাচন কমিশন মঞ্চস্থ করেছে তা নজিরবিহীন এক লজ্জাজনক ঘটনা।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই জনগণের ভোটের অধিকার-এর কথা বলেন, বিনা বাধায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রয়োগ করার অধিকারের কথা বলেন, কিন্তু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি জনগণের ভোটাধিকার চূড়ান্তভাবে হরণ করার যে নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তা ভূতের মুখে রাম নামের সমান। বাংলাদেশের নিবন্ধিত প্রায় ৪২টি দলের মধ্যে মহাজোটের অর্ন্তভুক্ত মাত্র ৫টি দলের অংশগ্রহণে এই সাজানো পাতানো-নীল নকশার নির্বাচন আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট ও অন্যান্য বিরোধী সংগঠনের নির্বাচন বয়কট করার আহ্বান আজ গণদাবীতে পরিণত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল এক ভাষণে বলেছেন ‘বিএনপিও নির্বাচনে এলে তাদেরও একইভাবে আসন বন্টন করা হতোÑ “তার এই বক্তব্যে থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে।” তার কথায় প্রমাণ হয় তিনি জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস কখনই মনে করেন না এবং জনগণের ভোটের প্রতিও তার কোন আস্থা নেই। আর জনগণের রায়কে তিনি ভয় পান বলেই, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমি ধস পরাজয়কে এড়ানো ও গণরোষ থেকে বাঁচার জন্য তিনি ভোটারদের অর্ধেকেরও বেশি সংসদীয় আসনে ভোট দেয়ার সুযোগ না দিয়ে তথাকথিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার কলঙ্ককে বরন করে নিতে কুণ্ঠিত হননি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতিতে আরো বলেন, সাজানো প্রশাসনের নির্বাচনের প্রহসন ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথিত ফলাফল বাতিলসহ নির্বাচনী কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং গণআন্দোলন বন্ধ করার এবং বিরোধীদল বিণাসী সরকারি কৌশল হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যা, গুমের যে অপরাজনীতি চালু করেছে তা ভয়ঙ্কর অমানবিক নিষ্ঠুরতা যা মানবাধিকার পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে অবনতির দিকে নিয়ে গেছে। সরকারের সৃষ্ট ভয়াবহ সংকট থেকে সরকারকেই বেরিয়ে আসতে হবে। বিরোধীদল হিসেবে আমরা গত পাঁচ বছরে চূড়ান্তভাবে নির্যাতিত হয়েও শুধু দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে এখনও সংকট নিরসনে এবং সকল দলের অংশগ্রহণ ও নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব থেকে দূরে সরে আসিনি।

কিন্তু সরকার যদি, জনগণের আকাঙ্খার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, গণগ্রেফতার ও ঢালাও নির্যাতন অব্যাহত রাখে তাহলে দেশ রক্ষার জন্য বিরোধীদলের আরো কঠোর আন্দোলনের কোন বিকল্প থাকবেনা।

আজও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও জয়পুরহাটে আন্দোলনরত বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের উপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বর্বোরোচিত গুলিবর্ষনে ৬জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। নারায়ণগঞ্জেও বিরোধীদলের উপর গুলি বর্ষন করে ১ জনকে হত্যা কর হয়। আমরা এই সকল হত্যাকা-ের এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নগ্ন হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি এসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এবং বলেন অবিলম্বে গুম, খুন, গণগ্রেফতার ও

নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় জনতার রুদ্ধরোষ থেকে পালিয়ে যাবার কোনো পথই খোলা থাকবে না।

মির্জা আলমগীর নিহত নেতা-কর্মীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।”